নারী প্রথমত কন্যা, এরপর স্ত্রী; পরবর্তীকালে মা। এই প্রধান তিন পরিচয় নারীর হলেও তিনি একজন স্বতন্ত্র মানুষ। নিজ যোগ্যতা, মেধা, দক্ষতা দিয়ে স্থান করে নেন এই জনবহুল পৃথিবীতে। তবু নারীর স্থান বা মর্যাদা কেন যে আজও এ সমাজের একাংশ কোনোভাবেই দিতে নারাজ, তা সত্যি বোঝা দায়।
এর কারণ হতে পারে প্রথমত নারীকে বিকৃত চোখ দিয়ে দেখতে একশ্রেণির খুব বেশি পছন্দ। তারা নারীকে চেনে, জানে যৌন উদ্রেকের ওষুধ হিসেবে। নারীকে দেখলেই লালসা জাগে। একইসঙ্গে উত্তেজক কামনার আগুন নিবৃত্ত করতে নারীকে মনে হয় সঙ্গী।
এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নারীকে কবে সত্যিই পূর্ণ মানুষ রূপে গণ্য করবে! কবে নারীর মূল্যয়ন হবে৷ যেকোনো নারীকে দেখলেই লালসাবৃত্তির খোরাক মনে হবে না। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ইতালির অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী জিনা লল্লোব্রিজিদা মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় জিনা লল্লোব্রিজিদার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মৃত্যুর খবরটি সাধারণ হলেও এই খবরটিকে কিভাবে অসাধারণ করে তোলা যায়, তা বর্তমান গণমাধ্যম কর্মীদের খুব করে কায়দা করা।
বাংলাদশের একটি নিউজপোর্টালের হেডলাইন দেখে বেশ ভিমরি খেতে হলো। তাদের হেডলাইনটি ঠিক এ রকম- ‘ইতালির অন্যতম আবেদনময়ী অভিনেত্রীর মৃত্যু।’ এই একটি টাইটেল সাধারণ মানুষের গায়ে সুড়সুড়ি জাগানোর মতো হেডলাইন। কেনই বা নারীকে পরিচিত করা হবে আবেদনময়ী হিসেবে। তিনি বিখ্যাত অভিনেত্রী। তার কর্মগুণে তিনি পরিচিত হতে পারতেন। কিন্তু কেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্যে তাকে জর্জরিত করা হলো।
আমরা জানি, শস্যের মধ্যেই ভূত! এই কথাটি পুরোপুরি সত্যি। কারণ মানুষ শেখে টিভি, নিউজ, সিনেমা, সংবাদমাধ্যম থেকে। সবার সামনে এটি একেকটি উদাহরণ হিসেবে কাজ করে। ফলে নারীকে এই শ্রেণির মানুষ যদি অসম্মানের পাত্রী করে তোলে, তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তা প্রচণ্ড অমানবিক। একইসঙ্গে অন্যায়ও।
একজন নারীর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, অন্যায় আচরণ, অন্যান্য নারীর প্রতি একই আচরণকে নির্দেশ করে। আমাদের সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নৈতিক শিক্ষাটা পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। আজকের যুগে এসেও এই ধরনের অশালীন শব্দ নারীর জন্য প্রাণে বেদনা জাগায়। সমাজকে যারা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে তাদের মগজে যদি কলুষতা ভরা থাকে তবে নারীরা যাবে কোথায়।
পৃথিবীর অন্যতম সংবেদনশীল মানুষ হওয়া উচিত গণমাধ্যম কর্মীদের। তাদের উচিত মানুষকে জাত, পাত, ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে মানুষ মনে করা। ফলে ধিক্কার জানাই এ ধরনের অশালীন উক্তি কারকের প্রতি। যদের বিবেক বর্জিত মন্তব্য নারীকে অসম্মানী করে তোলে। নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হলে আগে পুরুষতান্ত্রিক নোংরা মানসিকতা পরিহার করতে হবে।