আমার ভালোবাসা তোমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট
তবুও আমার এই ভালোবাসা কোথাও এককোণে তুলে রাখো জোয়ানা
যেভাবে অভিজ্ঞ ঊকিল তাকে তুলে রাখে—
গুরুত্বপূর্ণ কোনো রায়ের রেফারেন্স,
যেভাবে বিজ্ঞানী তুলে রাখে তার
ইমপিরিক্যাল ভাবনার অলটারনেটিভ হাইপোথিসিস,
যেভাবে অন্ধ তুলে রাখে তার তুখোড় কানে কোনো পরিচিতি কণ্ঠের স্বাদ।
আমি জানি— একটা রাঙা ঠোঁট প্রায় প্রতিদিন চুমু দিয়ে লাল করে দেয়
তোমার মিষ্টি কবরী-অধর,
অফিস-ফেরত একটি ঝড়ীয় যৌবন প্রায়শ সন্ধ্যায় ঢেউনদীর
ডিঙ্গিনৌকা করে তোলে তোমার জলপিপাসার উতলা শরীর,
একটি মাতাল নেশা দুহাতে জড়িয়ে ধরে তোমাকে করে তোলে সুনগ্ন প্রতিমা
তুমি হাত দিয়ে লজ্জা ঢাকার ভানটুকুও ভুলে যাও;
আমার ভালোবাসা এসব কিছুই করেনি; তবুও তাকে তুলে রাখো জোয়ানা।
আমার ভালোবাসা বঙ্গোপসাগরের হৈমন্তিক হাওয়া
যখন তুমি হাঁপিয়ে উঠবে নিবিড় ছকবাঁধা প্রাত্যহিকতায়
যেমন হাঁপিয়ে ওঠে ভ্যাপসা সাঁঝে ভাদরের ঢাকাশহর,
যখন সংগম-উত্তর প্রাণের পাতায় উড়ে এসে জমা হবে ক্লান্তির কার্বন গ্যাস,
তখন ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আমার একমুঠো ভালোবাসা মেখে নিও মনে
যেভাবে তুমি মেখে নাও রোজ বগলে, বুকের মৌচাকে,
সংবেদনশীল শস্যের ক্ষেতে
ঘামরোধী ট্যালকম পাউডার।
দেখো—পরদিন তুমি দ্বিগুণ ক্ষুধায় জড়িয়ে ধরবে পুরাতন বাহু।
আমার ভালোবাসা রেখে দাও জোয়ানা-রেখে দাও রিজার্ভ ফান্ডে তোমার
যেভাবে সোনাব্যাং লুকিয়ে রাখে কুড়িয়ে পাওয়া আধুলিটি তার,
যেভাবে গোপন ফাইল লুকিয়ে রাখে পাসওয়ার্ড-যুক্ত হার্ড ডিস্ক
যেভাবে কবি রেখে দেয় প্রিয়তম অধরের পাশে একখানা একাদশীর চাঁদ!
আমি কবি-দৃষ্টি নিয়ে দেখেছি,- এক পৃথিবী আগুন নিয়ে জন্ম হয়েছে তোমার
যদিও তোমাকে অগ্নিকন্যা বলবে না কেউ,
যে যুবক প্রত্যহ দুহাতে জড়িয়ে ধরে তোমার চিতাবাঘের কোমর
তোমাকে খুলে ফেলে লোভ ভরে দেখে নেয় কাটা-তরমুজ নগ্নতা
বিস্ময়ের কিছু নেই যে সেও দেখে না তোমার এই আগুন।
অথচ কোনোদিনও তুমি বুকের পাথরে পাথর ঘঁষে আগুন হবে নাকো-
তোমার চারপাশ হয়ে উঠবে না উর্বর আলোর পৃথিবী
একথা ভাবতেই খটকা এসে খোটা দেয় আমার মগজের ডান গোলার্ধে।
এই দ্যাখো- আমার বুকের মাঝেও একখানা আদিম পাথর আছে
আর আমি প্রস্তর যুগ থেকে উঠে আসা মানুষ বলে জানি-
কীভাবে জ্বালাতে হয় সে আগুন- পাথর ঘঁষে পাথরে।
অতএব আমার এই ভালোবাসা রেখে দাও জোয়ানা-
যেভাবে বাড়তি জলও রেখে দেয় মরুভূমির ঊট
যেভাবে ওস্তাদ রেখে দেয় দক্ষ হাতে তার শেষ মার
যেভাবে টপ ট্রামকার্ড বাঁচিয়ে রাখে অভিজ্ঞ জুয়াড়ি;
আর এত এত সম্পদ নিয়ে একবারও জুয়া খেলবে না জীবনে
সে কী করে হয়?
তাহলে কেন এই জীবন? কী কাজ এত এত বাড়তি সম্পদের?
আমার ভালোবাসা নখদন্তহীন না হলেও সে তোমাকে কোনোদিনও
গালমন্দ করবে না প্রাত্যহিক হিসাব না মেলার অভিযোগে
প্রতিভোরে বাজারের ব্যাগে রান্নার উপকরণের সাথে কান্না এনে
বিষিয়ে দেবে না সুরভিত স্বপ্নের মন
কিংবা অ-নবায়িত সম্পর্কের একঘেঁয়েমিতে ক্লান্ত করে দেবে না
ভালোবাসার মনটিকে তোমার।
আমার ভালোবাসা ধরে রাখো সুহৃদা
যেভাবে আনন্দ ধরে রাখে অননুমোদিত প্রথম চুম্বনের স্মৃতি
যেভাবে ব্রা ধরে রাখে পালিয়ে যেতে বসা যৌবনের ঢেউ
যেভাবে নদী রাখে নতুন বন্যায় গর্ভবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা।
আর এতদিন যা বলিনি—আজ তাও শুনে রাখো বন্ধু
মুদির দোকানি হতে পারে না কখনো-
সপ্তমধুকর ডিঙার সিন্ধু-সওদাগর,
পাটিগণিতের পন্ডিত যে তোমাকে প্রায়শ ফুলমার্ক দিত
চলিত নিয়মের অংকের অনুশীলনে,-ভেরি গুড!—
সে কখনো খুঁজে পায় না বিল গেটস হওয়ার ফরমুলা;
হাজার তৈরি করুক স্কীনটাইট ব্লাউজ-শেমিজ-ব্রা
দরজি কি বানাতে পারে স্বপ্নের শামিয়ানা কিংবা আকাশের বুকের ওড়না?
অতএব ‘বন্ধু তোমার পথের সাথিকে চিনে নিও’ !
আমার ভালোবাসা নিপাতনে সিদ্ধির ধন,—তার চায়
বেহিসাবের সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর
আর সে-হিসাব খুলতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি কিংবা
ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার দেয় চারিত্রিক সনদেরও দরকার হবে না
আর এও ভালো যে,—¬ভালোবাসার রাজ্যে আজও চাকরি করে না
দিনকে রাত আর রাতকে দিন বলে প্রত্যয়নে পারঙ্গম টিকটিকি সম্প্রদায়।
আমার ভালোবাসা রেখে দাও জোয়ানা,
রেখে দাও—তোমার গোপন বেহিসাবের সঞ্চয়ী হিসাবে।
৩ Comments
‘ আমার ভালোবাসা তোমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট’ – কবি আমিনুল ইসলামের একটি দীর্ঘ কবিতা। শিরোনামে যথার্থই বলা হয়েছে কবিতাটি ” অনেকখানি অভিনব ভাষায় রচিত “। ” আমার ভালোবাসা নিপাতনে সিদ্ধির ধন” – এতো এক নান্দনিক অভিনবত্ব!
কবি বলতে চেয়েছেন, ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে দামী। আর এ দামী ভালোবাসা স্বযত্নে তুলে রাখার আকুতি জানিয়েছেন তার জোয়ানার কাছে – দারুণ সব উপমা- রুপক- চিত্রকল্পের মাধ্যমে। জোয়ানা যেন নিশ্চিতভাবে তার পথের সাথীকে চিনে নিতে পারে।
মুগ্ধ প্রহর ভরিয়া এ কবিতা পড়া। একটি চমৎকার প্রেমের কবিতা। মতিহারকে ধন্যবাদ এই মতিহার সাজানোর জন্য।
সম্পাদক জান্নাতুল যূথীকে ধন্যবাদ কবিতাটি যত্নসহকারে নির্ভুলভাবে এবং শৈল্পিক সৌন্দর্য বজায় রেখে ছাপানোর জন্য। এরই নাম সুসম্পাদনা।
এই কাব্যগ্রন্থের সবগুলো কবিতাই ভয়ংকর সুন্দর, আর নাম কবিতাটি তো বাড়তি পাওয়া। প্রেমের কী সুন্দর নমুনা,কী নান্দনিক সব উপমা! কবি তাঁর হৃদয় নিংড়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অসাধারণ সব শব্দের সংমিশ্রণে কবিতাটিকে মারাত্মক লেবেলে নিয়ে গেছেন । কবি তাঁর হৃদয়ে আরো বেশি প্রেম যে লালন করেন তা আমার বিশ্বাস। জয়তু প্রেমের আপগ্রেড ভার্সনের মহান কবি ।