শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার নিকট অঙ্গ। চলবে তার সঙ্গে একতালে এক সুরে। সেটা ক্লাস নামধারী খাঁচার জিনিস হবে না। আর যে বিশ্বপ্রকৃতি প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে আমাদের দেহে মনে শিক্ষাবিস্তার করে সেও এর সঙ্গে হবে মিলিত। প্রকৃতির এই শিক্ষালয়ের একটা অ্য পর্যবেক্ষণ আর একটা পরীক্ষা এবং সকলের চেয়ে বড়ো তার কাজ প্রাণের মধ্যে আনন্দসন্তার। …১৩৪০ সালের আশ্বিন মাসে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন একথা। ‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ প্রবন্ধে। যে শিক্ষাতত্বকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন তার মূলকথাও ছিল তাই। অথচ তিনি নিজেও জানতেন যে এই শিক্ষাতত্ত্বর প্রসার সহজ হবে না। তাঁর কথায়, … এতে যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন ছিল। কেননা এর পথ অনভ্যস্ত এবং চরম ফল অপরীক্ষিত। এই শিক্ষাকে শেষ পর্যন্ত চালনা করবার শক্তি আমার ছিল না। কিন্তু এর পরে নিষ্ঠা আমার অবিচলিত।
রবীন্দ্রনাথের নিজের শিক্ষা প্রথাগত পথে চলেনি। বারবার বাধা এসেছে তাঁর শিশু বয়সের শিক্ষাধারায়। অথচ তাঁর শিক্ষাভাবনা এগিয়েছে সুনির্দিষ্ট পথ ধরে। তার শিক্ষাচিন্তার প্রধান তিনটি বিষয় ছিল আধুনিকতা, সৎসাহস আর উদারতা। কোনো ক্ষেত্রেই তাঁর শিক্ষাভাবনা বাঁধা পড়েনি পুঁথিগত নিয়মনীতিতে। তিনি শিক্ষার [ জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গড়েছেন এবং বিভিন্ন লেখায় ও বক্তৃতায় যে ভাবনার কথা বলেছেন, তা সবই বাস্তব থেকে আলোকপ্রাপ্ত হয়ে।
শিক্ষা, সাম্য ও গণমুক্তির আদলের কথা বারবার বলেছেন তিনি। তাঁর বদনে, “আমি স্বপ্ন দেখি সেই দিনটির যেদিন আর্যসভ্যতার ঐ প্রাচীন ভূমির (ভারতবর্ষের) সব মানুষ শিক্ষা ও সাম্যের মহাশীর্বাদ লাভ করবেন। অর্থাৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে গণমুক্তির স্বপ্ন এবং তাদের শিক্ষিত করে তোলা, দুটি বিষয়ই সমান মর্যাদা পেয়েছে রবীন্দ্রভাবনায়। বাইরের জগতের কাছে তাঁর প্রধান পরিচয় প্রধানত একজন বড়ো কবি হিসেবে। বিশ্বের সবদেশের সব কালের শ্রেষ্ঠ মহাকবিদের মতে তিনি অন্যতম নিঃসন্দেহে। কবিতা ও গান ছাড়াও তাঁর অন্য সব ধরনের লেখাই অনুবাদের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্বসাহিত্যকে। কিন্তু এসবের বাইরে তিনি যে ছিলেন আনতপন্থী শিক্ষারতী- তা তার শিক্ষাচিন্তা থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম তৈরি হচ্ছে ১৯০১ সালে। সেই সময় থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা নিয়ে নানা আলোচনা করেছেন। কাজ করেছেন হাতে-কলমে। এই দীর্ঘ সময়ে ভারতবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে যেসব শিক্ষানীতি চালু হয় সেগুলির কোনটাই রবীন্দ্রনাথের চোখ এড়িয়ে যায়নি। তাঁর শিক্ষা বিষয়ক নিবন্ধগুলির বেশিরভাগই লেখা হয়েছে ১৯০৫ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ (১৯০৫), ১৯০৬ সালে লেখা শিক্ষাসংস্কার, শিক্ষাসমস্যা, জাতীয় বিদ্যালয় ও আবরণ, তপোবন (১৯০৯), ধর্মশিক্ষা (১৯১১), শিক্ষাবিধি এবং লক্ষ্য ও শিক্ষা (১৯১২) ও ১৯১৫ সালে লেখা স্ত্রীশিক্ষা, শিক্ষার বাহন এবং ছাত্র শাসনতন্ত্র।
সেদিনকার ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে বলছেন, বুদ্ধি ও ইচ্ছার টান বাহিরের দিকে এত বেশি যে অন্তরের দিকে কেবলই বিশ্বতা।
১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ঘোষিত ভারত সরকারের শিক্ষানীতি এবং ১৯১৭ তে নিযুক্ত ও ১৯১৯-এ প্রকাশিত স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ সত্ত্বেও ভারতে শিক্ষাক্ষেত্রে তেমন কিছুই উন্নতি ঘটেনি। ১৯১৯ থেকে ১৯৩৬ এর মধ্যে লেখা নানা প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সংস্কারের নানা পরামর্শ দিয়েছেন, করেছেন সমালোচনাও। এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ ১৯১৯ সালে অসন্তোষের কারণ, বিদ্যার যাচাই, বিদ্যা সমবায়, শিক্ষার মিলন (১৯২১), ১৯৩২–৩৩ সালে লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ ও শিক্ষার বিকিরণ এবং ১৯৩৫-৩৬ সালে লেখা শিক্ষা ও সংস্কৃতি, শিক্ষার স্বাত্মীকরণ, আশ্রমের শিক্ষা ও ছাত্র-সম্ভাষণ।
ব্রিটিশদের উদ্যোগে এ সময় কনোকটি শিক্ষানীতির প্রচলন ৩ সংস্কার করা হয়। কার্জন নিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন ও তার প্রতিবেদন (১৯০৪), ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে আমলের প্রাথমিক শিক্ষা বিল-এর প্রত্যাখ্যান (১৯১২), ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষানীতির ঘোষণা (১৯১২), স্যাডলার কমিশন নিযোগ (১৯১৭), প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন, বেলাল বুরাল প্রাইমারি এডুকেশন আইন প্রণয়ন (১৯৩০) প্রভৃতি এগুলির মধ্যে উল্লেখ্য। ১৯৩৪ থেকে ৪৪ সালের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষান্তরে পলিটেকনিক, বৃত্তিমুখী শিক্ষা এবং সার্জেন্ট ম্যান (১৯৪৪) ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিকাঠামো তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ১৯৩৮ সালে গান্ধীজী বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থার একটি কাঠামো তৈরি করেন ওয়ার্থা পরিকল্পনায়। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কোনো পরিকল্পনারই রূপায়ন দায়িত্ব নিয়ে করেনি।
উনবিংশ শতকের শেষের দিকে ভারতের নানা অঞ্চলে ব্রিটিশ সরকারের প্রভাবমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। লাহোরে দয়ানন্দ অ্যাংলো-বেদিক কলেজ, কাশীতে সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ, হরিদ্বারে স্বামী প্রস্থানন্দের গুরুকুল এবং বোলপুরে রবীন্দ্রনাথের ব্রহ্মচর্যাশ্রম এগুলির মধ্যে অন্যতম। কার্জনের শিক্ষানীতিকে বাংলার শিক্ষাবিদরা কোনোদিনই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে এর প্রতিবাদে তৈরি হয় বাংলার জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিল। এই পরিকল্পনায় মুখ্য ভূমিকা নেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাসবিহারী ঘোষ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গ্যে অগ্রগামী ছিল রবীন্দ্রনাথের বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রম। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মাধ্যম করা হয় মাতৃভাষা বা ভার্নাকুলার জাতীয় শিক্ষা ।। স্বদেশী আন্দোলনের ঢেউ যখন থেমে এল তখন জাতীয় বিদ্যালয়গুলি বিপাকে পড়ে। টিকে থাকে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট (যার পরবর্তী আকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)। স্বদেশী আন্দোলনের ফলে বয়স্ক শিক্ষার সাড়া মিলল। গ্রামে-শহরে তৈরি হল অজস্র নৈশ বিদ্যালয়। দেশজুড়ে সচেতনতা দেখা দিল প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে। রবীন্দ্রনাথ কোনোভাবেই সরে আসেননি তাঁর শিক্ষাভাবনা থেকে। সে ভাবনারই ফসল পরবর্তীকালের বিশ্বভারতী।
যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের মুখপাত্র স্যার হারকুর্ট বাটলার ঘোষণা করেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে আবশ্যিক ঘোষনার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। ইংরেজ শাসনের দেড়শ বছর পরেও ভারতে সাক্ষর লোকের সংখ্যা ছিল শতকরা ৫ থেকে ৬ স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই তিনি (১৯১৭ সাল) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর বিভাগ চালু করে দেন। রবীন্দ্রনাথ ভূষণ প্রশংসা করেন তাঁর এই কাজের।
সে সময়ে ভারতের শিক্ষা ভাবনা নিয়ে আলোচনা করার সময় কয়েকটা শিক্ষা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান মনে রাখা দরকার। ১৯৪৪ পর্যন্ত ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৪৪ ভারতের জনসংখ্যা তখন ৩০ কোটি। সারা দেশে সে সময় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার। তাদের মধ্যে ছাত্রী ১৬ হাজার।
রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধগুলি থেকে এটি পরিষ্কার যে তিনি আধুনিক শিক্ষাভাবনার প্রতিটি বিষয়ে আলোচনা ও আলোকপাত করেছেন। তাঁর আলোচনার যেমন এসেছে জাতীয় শিক্ষার পদ্ধতি ও লক্ষ্য, ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক, শিক্ষাদানে মাতৃভাষার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা : তেমনই আবার নারীশিক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক শিক্ষার আদর্শের কথাও। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির দিকগুলিও আলোচনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনায় প্রথামাফিক পুঁথিগত শিক্ষার ছাপ কোথাও পড়েনি। নিজে যা দেখেছেন এবং জীবন থেকে যা সংগ্রহ করেছেন তারই প্রভাব পড়েছে পর্যালোচনায়। তাঁর শিক্ষাচিন্তা যেমন আধুনিক, তেমনই উদার ও সর্বজনীন। ১৯০৫ সালে লিখেছেন “ছাত্রদের প্রতি সম্ভাষণ । প্রশ্ন তুলেছেন বিদেশি পরিচালনার মহাবিদ্যালয় স্তরের শিক্ষানীতি নিয়ে। প্রস্তাব দিয়েছেন স্বাধীন শিক্ষার। পুঁথির গণ্ডির বাইরে আনতে চেয়েছেন শিক্ষা ও শিক্ষার্থীকে। শিখতে বলেছেন বাংলার উপভাষা, নানা জনসম্প্রদায়ের ভিন্ন ধর্মাচার, লোকাচার, সমাজনীতি। জোর দিয়ে বলেছেন, ঘরের পাশের সমাজ ও পাড়াকে এড়িয়ে প্রকৃত শিক্ষা বেশিদিন সম্ভব নয়।
‘শিক্ষা-সংস্কার’ লেখা হয় ১৯০৬ সালে। ব্রিটিশ সরকার আয়ারল্যান্ডের মতো আমাদের দেশেও যে শিক্ষাব্যবস্থাকে গভীর সঙ্কটে ফেলছে তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মত ছিল, স্যাকশন শিক্ষা নীতিতে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ১৩-১৪ বছর থেকে ১৯-২০ বছর ব্যাস পর্যন্ত ইংরেজি ভাষার বিদ্যাচর্চায় হিমসিম খাচ্ছে। টলস্টয়ও ঠিক একইভাবে বলেছেন, জার শাসিত রাশিয়ায় এভাবেই মানুষের মননে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য ছিল, শৃঙ্খলার নামে পরের হুকুম মেনে নেওয়ার শিক্ষাবিধান চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জাতীয় বিদ্যালয় যখন গড়া হচ্ছে তখন রবীন্দ্রনাথ লেখেন শিক্ষা সমস্যা, জাতীয় বিদ্যালয় ও আবরণ। তাঁর সুনির্দিষ্ট মত ছিল, ইউরোপের বিদ্যালয়ের ধারা নকল করলেই এদেশে যে একই শিক্ষা দেওয়া যাবে তা অসম্ভব। দেশের মানুষের ও পরিবেশের চরিত্র অনুসারে শিক্ষা পদ্ধতি তৈরি হওয়া দরকার। মানুষ ও সমাজ থেকে আলাদা করে একটি শিশুকে শিক্ষাদান সব নয়। ইংরেজি স্কুলের সঙ্গে সমাজ ও দেশের সংযোগ কোনদিন হতে পারে না।
এ প্রসইে এনেছেন প্রাচীন ভারতের শিক্ষার কথা। সেই শিক্ষায় জীবনের সঙ্গে যোগসাজশের অভাব । গুরু থেকে পড়াশোনা বা ব্রহ্মচর্য পালনকে তাই তিনি অস্বীকার করেননি। ।। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় খোলা আকাশ ও পরিবেশের প্রভাব ছিল। যার কোন স্বীকৃতি ব্রিটিশ শিক্ষানীতিতে মেলেনি। ‘জাতীয় বিদ্যালয় নিবন্ধে বলেছেন, জাতীয় বিদ্যালয় প্রি আমাদের আত্মনির্ভরতা জাগিয়ে তুলেছে। একে তিনি বলছেন, আত্মশক্তির উদ্বোধন। এর ফলে প্রমানিত হল, অন্যের ওপর নির্ভরতা মুচবে। দেশ ও দশের জন্যে আমরা অন্তত কিছু কাজ শুরু করলাম।
শিক্ষার নামে শিশুর মনকে বেঁধে রাখার তীব্র বিরোধী ছিলেন তিনি। ‘আবরণ নিবন্ধে তাঁর সাফ কথা, “বিদ্যা জিনিসটা একটা যেন স্বতন্ত্র পদার্থ। শিশুর মন হইতে সেটাকে যেন তফাত করিয়া দেখিতে হয়। সেটা যেন বইয়ের পাতা এবং অক্ষরের সংখ্যা। তারই সূত্র ধরে পৌঁছেছেন তপোবন শিক্ষায়। ১৯০৯ সালে লিখছেন ‘তপোবন’ প্রবন্ধ। জ্ঞানের যোগের সঙ্গে যুক্ত করেছেন বোধের যোগকে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি বোধের শিক্ষার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গেই এসেছে ধর্ম শিক্ষার কথা।
রবীন্দ্রনাথের কথায়, বোধের যোগের দ্বারাই আমরা সমস্ত জগতের মধ্যে তাকেই উপলব্ধি করি যিনি সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। ধর্মবোধ যে উদার এ সঙ্কেত এখানেই পাওয়া যায়। ‘ধর্মশিক্ষা নিবন্ধে তিনি জোর দিয়েছেন স্বাভাবিক ধর্মশিক্ষার ওপর। তিনি মনে করতেন, ধর্ম যেখানে পরিব্যাপ্ত ধর্মশিক্ষা সেখানে স্বাভাবিক। ১৯১১ সালে তিনি লিখছেন এই প্রবন্ধ। সেদিনকার ব্রাহ্মসমাজ সম্পর্কে বলছেন, বুদ্ধি ও ইচ্ছার টান বাহিরের দিকে এত বেশি যে অন্তরের দিকে কেবলই বিশ্বতা। অন্যান্য আধুনিক সমাজের মতো ব্রাহ্মসমাজেও ভোগের তাণ্ডব, ধর্মচর্চা সেখানে উপেক্ষিত।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে না আছে বিশ্বনিয়মে আস্থা, না আছে ব্যক্তিবিশেষ ও পলিটিকাল স্বাতরো আস্থা। আমরা নিজেদের বুদ্ধিবিভাগে কর্তাভজা।
রবীন্দ্রনাথের এই সমাজ বিশ্লেষণ যে নির্ভুল তা এখনও গ্রহণযোগ্য। আদিম বিশ্বে শিক্ষা বিষয়টাই ছিল ধর্মাচার্যদের হাতে। পরে তা এল রাষ্ট্রকর্তাদের হাতে। এর ফলে ধর্মশিক্ষার সঙ্গে বিদ্যাশিক্ষার যোগ ছিন্ন হয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ জানালেন, শান্তিনিকেতনে তিনি সেই আশ্রম বিদ্যালয় গড়ছেন, যা দিতে পারে প্রকৃত ধর্মশিক্ষা। ১৯১১ সালে তিনি বলেছেন একথা। ১৯২১ সালে তৈরি হল বিশ্বভারতী। যার লক্ষ্য, ‘যত্র বিশ্বা ভবত্যেক নীয়ম্।
“শিক্ষাবিধি প্রবন্ধটি লিখেছেন বিলেতে। বিদেশ যাওয়ায় তাঁর অনেকগুলি লক্ষ্য ছিল। তার মধ্যে একটি, ব্রিটিশদের স্কুলগুলিকে ভালো করে দেখে নেওয়া। শিক্ষার বিদেশি ধারা আমাদের দেশে খাটে কি না। সে সময়ে শিক্ষাবিধি নিয়ে দু’দলের মধ্যে যে লড়াই চলছিল তাও রবীন্দ্রনাথের চোখ এড়িয়ে যায়নি। একদল বলছেন, প্রকৃতির নিয়মে আপন গতিতে শিক্ষাগ্রহণ চলুক। অন্যদলের মত, আপন শক্তির প্রয়োগে সাধনার মাধ্যমে কোন বিষয়কে আয়ত্ত করা দরকার। রবীন্দ্রনাথের মত ছিল, এদুয়ের সামান্য সাধনই মানুষের পক্ষে সংশিক্ষা।
স্ত্রী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সে সময় নানা মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। রবীন্দ্রনাথ ‘শিক্ষা’ নিবন্ধ লিখলেন ১৯১৫ সালে। মেয়েদের শিক্ষা দিলে ঝাঁটা বঁটি শিলনোড়ার কাজটি কে করবে এই মুক্তিতে আনেকেই মেয়েদের শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত করতে চান। এই মনোভাবকে রবীন্দ্রনাথ একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। তার সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল, মেয়েরা যদিও বা কান্ট- হেগেল পড়ে তবুও শিশুদের স্নেহ করবে, দূর-ছাই করবেনা পুরুষদের। তাই মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখা উচিত নয়। তবে শিক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রে তিনি স্ত্রী- শিক্ষার বিশেষ কিছু প্রণালীর প্রয়োগ চান। তাঁর মতে, বিদ্যার দুটি বিভাগ–বিশুদ্ধ জ্ঞানের ও ব্যবহারের। মেয়েদের স্বভাবকে মেনেই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কিছু রদবদল চলতেই পারে। একই বছরে রবীন্দ্রনাথ লেখেন ‘শিক্ষার বাহন নিবন্ধ। এই নিবন্ধে তিনি সুস্পষ্ট জানান, শিক্ষার বাহন হবে ইংরেজি না বাংলা গোখলে তার আগেই প্রাথমিক শিক্ষা বিল এনেছেন ইম্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল-এ। তা বাতিল হয়ে যায় সাথে সাথে। শিক্ষার বাহন প্রকাশের দু’বছর পর (১৯১৭) স্যাডলার কমিশন নিযুক্ত হয়। তারও দুবছর বাদে এই কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সে সময়কার ব্রিটিশ মুখপাত্র স্যার হারকুট বাটলার প্রাথমিক শিক্ষাকে আবশ্যিক ঘোষনার দায়িত্ব অস্বীকার করেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তখন স্যাডলার কমিশনের সদস্য।
তিনি এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ইতিবাচক কিছু সিদ্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথ এই নিবন্ধে বলেন, “দেশে বিদ্যাশিক্ষার যে বড়ো কারখানা আছে তার কলের ঢাকার অল্পমাত্র বদল করিতে গেলেই বিস্তর হাতুড়ি পেটাপেটি করিতে হয়, সে খুব শক্ত হাতের কর্ম। আশু মুখুজ্ঞে মশায় ওরই মধ্যে এক জায়গায় একটুখানি বাংলা হাতল জুড়িয়া দিয়াচ্ছেন। তিনি যেটুকু করিয়াছেন তার ভিতরকার কথা -এই, বাঙালির ছেলে ইংরেজি বিদ্যায় যতই পাকা হোক বাংলা না শিখিলে তার শিক্ষা পুরা হইবে না।” রবীন্দ্রনাথের নজর এড়িয়ে যায়নি মাতৃভাষার যারা উচ্চশিক্ষা দানের সমস্যা। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রবন্ধগুলিতে তারই উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর একটা বড় সঙ্কট আসে। ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায়। সেই সঙ্কটের সমাধানের বেশ কয়েকটি পথ দেখিয়েছেন। ভারতের এবং ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ইতিহাস নিয়ে তাঁর যে গভীর জ্ঞান ও ভাবনা তার পরিচয় আমরা পাই ‘বিদ্যাসমবায়’ (১৯১১) রচনায়। অতীতে বিদ্যা বিষয়টি ছিল কিছু মানুষের একচেটিয়া। মা করে তিনি বলছেন, ‘আর সব দেশের বিদ্যা মানবের স্বাভাবিক বৃদ্ধিবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ভ্রম কাটিয়ে বেড়ে উঠেছে। কেবল আমাদের দেশেই বিদ্যা ঋষিদের একচেটিয়া। দীর্ঘকাল আমরা বিদ্যাকে একঘরে করে রেখেছিলাম—অতি সম্মানের যারা এ পথ আত্মঘাতী পথ। তিনি সে সময়েই বলছেন, আজ বিদ্যাসমবায়ের যুগ্ম এসেছে। এ দেশেও বিদ্যা সমবায়ের একটা বড়ো ক্ষেত্রে চাই, যেখানে ভারতীয় বিদ্যাকে মানবের সকল বিদ্যার ক্রমবিকাশের মধ্যে রেখে বিচার করতে হবে। আর তাই করতে গেলে ভারতীয় বিদ্যাকে তার সমস্ত শাখা-উপশাখার যোগে সমগ্র করে জানা চাই।
লক্ষ্য করে দেখুন, তুলনামূলক বিদ্যাচর্চার দাবি রবীন্দ্রনাথ যখন তুলছেন, তখন এ ভাবনা আর কারও ভরতে আসেনি। তার মতে, আমদের দেশে বিদ্যার নদী বৈদিক, পৌরাণিক, বৌদ্ধ ও জৈন এই চারশাখায় বয়ে চলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউরোপীয় বিদ্যার স্রোত। মুসলমান ও পার্সি বিদ্যার স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে ইউরোপীয় বিদ্যা। তাঁর সুনির্দিষ্ট দাবি ছিল, প্রতিটি বিদ্যায়তনে ছটি স্রোতকে স্থান দিতে হবে। ‘বিদ্যাসমবায় প্রবন্ধে তিনি এসব ভাবনার কথা লিখেছেন ১৯১৯ সালে। তাকে ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করেছেন ১৯২১ সাল থেকে ‘বিশ্বভারতী’র মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, পশ্চিমের দেশ দুটি বিষয় সত্য বলে জেনেছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নিয়মের কোথাও এতটুকু জুটি থাকতে পারে না। রাইনিয়ম ব্যক্তিবিশেষের বা সম্প্রদায় বিশেষের খেয়ালের জিনিস নয়। সেই নিয়মের সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের সম্মতির সম্বন্ধ আছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে না আছে বিশ্বনিয়মে আস্থা, না আছে ব্যক্তিবিশেষ ও পলিটিকাল স্বাতরো আস্থা। আমরা নিজেদের বুদ্ধিবিভাগে কর্তাভজা। এখানেই আমাদের যথার্থ পরাধীনতা।
পুঁথিগত বিদ্যা বা শিক্ষাভাবনাকে তিনি কখনই গ্রহণ করেননি। নিজের জীবন থেকে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে যা পেয়েছেন, প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন তাই। শিক্ষাভাবনায় যে অচলায়তন তাকে আঘাত করেছেন নানাভাবে।
এই সংকট থেকে সমাধানে পথ নির্দেশ করেছেন তিনি ‘শিক্ষার মিলন’ রচনায়। রবীন্দ্রনাথের সাফ কথা, একমাত্র মুক্তির উপায় প্রকৃত শিক্ষা। বর্তমান যুগের সাধনার সঙ্গেই বর্তমান যুগের শিক্ষার সংগতি হওয়া চাই। স্বজাত্যের অহমিকা থেকে মুক্তিদান করার শিক্ষাই আজকের দিনের প্রধান শিক্ষা বলে তিনি মনে করেন। আগামী দিনে প্রতিটি দেশের ও জাতির সহযোগিতায় এই অধ্যায় শুরু হবে বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল। তিনি এসব কথা বলছেন যখন, তখন সবে শেষ হয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ইউরোপে তৈরি হয়েছে ‘জাতিসংঘ’। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, শিক্ষাই সব দেশের সব জাতের মানুষকে মেলাতে পারে। তাই শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলিকে তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের মিলনকেন্দ্র করে তুলতে চেয়েছেন। তিনি চেয়েছিলেন, “ভারত আজ সমস্ত পূর্ব ভূ- ভাগের হয়ে সত্য সাধনার অতিথিশালা প্রতিষ্ঠা করুক। তার ধন-সম্পদ নেই, কিন্তু সাধন-সম্পদ আছে তার জোরেই ভারত সত্যসাধনার মিলন ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করুক ? ১৯৩২ সালে ভাষণ দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ উপলক্ষে লিখলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ’। বিশ্ববিদ্যালয় যে ইউরোপে শুরু হয়েছে সে কথা তিনি অস্বীকার করেননি। কিন্তু তাঁর মতে, এর অনেক আগে তৈরি হয়েছে তক্ষশিলা, নালন্দ ও বিক্রমশীলা বিদ্যায়তন। বিশ্ববিদ্যালয় ভাবনা এসেছে এর থেকেই। এইসব বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যার প্রসার শুধু করেনি, সারা বিশ্বের ছাত্রকে টেনে এনেছে এখানে। অথচ সেই গৌরবকে আমরা পরে ধরে রাখতে পারিনি।
শিক্ষা ভাবনা ও শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনের যোগ ঘটাতে হবে বলে তিনি বারবার দাবি করেছেন। দেশের মানুষ ও মাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে জনশিক্ষাব্যবস্থা। লোককথা,লোকগান, পালাগান, কীর্তন, যাত্রা এসবের মধ্য দিয়ে মানুষ নানাভাবে শিক্ষালাভ করেছে। ব্রিটিশ আমলে তার ওপর আঘাত এসেছে। শহরের মানুষ ইংরেজি শিক্ষা পেয়েছে। ফলে দেশের অন্যান্য অংশের মানুষের সঙ্গে দেওয়াল উঠতে শুরু করেছে। নগর হয়ে উঠল প্রানবন্ত। ভাটা পড়ল গ্রামে। এ প্রশ্ন তুলেছেন ‘শিক্ষার বিকিরণ’ রচনা ১৯৩৩ সালে। তাঁর পরামর্শ ছিল, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় যদি গ্রামের মানুষের মনের খোরাক যোগাতে পারে তবেই প্রকৃত লাভ সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি আজকের “মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়’ ঘরানায় কাজ করার পরামর্শ দেন। তাঁর সুস্পষ্ট দাবি ছিল, এই শিক্ষা একমাত্র দরকার মাতৃভাষার মাধ্যমে।
রবীন্দ্রনাথ শিক্ষায় মানবিক গুনগুলির চর্চার কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন। তাঁর মতে, প্রাচীন ভারতে এধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সংস্কৃতির অনুশীলন ছাড়া অন্তরের পূর্ণতা সাধন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়েছেন শৃঙ্খলা মেনে কাজ এবং মর্যাদাবোধ বাড়ানোর ওপর। বোলপুর ব্রহ্মচর্যাশ্রমেও তাঁর প্রধান বক্তব্য ছিল, আত্মবিশ্বাস বাড়ার। এসব আলোচনা তিনি করেছেন ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি’ নিবন্ধে ১৯৩৫ সালে। পরের বছর তিনি লেখেন ‘শিক্ষার স্বাক্ষীকরণ” নিবন্ধটি তাঁর সাফ কথা ছিল, মাতৃভাষায় ভাবপ্রকাশের সুযোগ ও অধিকার পেলে তা যুক্ত হয় জীবনের সঙ্গে। নিজের পড়াশুনার আরম্ভের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলছেন, ‘ভাগ্যবলে অখ্যাত নর্মাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। তাই কচি বয়সে রচনা করা ও ইংরেজি ভাষার সঙ্গে কুস্তি করাকে এক করে তুলতে হয়নি….এটা বুঝেছি মাতৃভাষায় রচনার অভ্যাস সহে গেলে তার পরে যথাসময়ে অন্য ভাষা আয়ত্ত করে সেটাকে সাহসপূর্বক ব্যবহার করতে কলমে বাধে না। ইংরেজির অতি প্রচলিত জীর্ণ বাক্যাবলী সাবধানে সেলাই করে কাথা বুঝতে হয় না।”
প্রসিদ্ধ রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ‘বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাসবোধ’ প্রবন্ধে লিখছেন, ‘কবির ভাষায় বলি, আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যাবেলায় দীপ জ্বালার আগে সকালবেলায় সলতে পাকানো। বিশ্বভারতী বিশেষ কোনো সরকারি আইনের বলে একদিন বিশেষ একটি স্থানে, বিশেষ দেশ, বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ নগরীর নামে সৃষ্টি হয়নি ….এটি একটি আইডিয়া। এই আইডিয়া কবির মনে ধীরে ধীে জন্মায়। রবীন্দ্রনাথের এই ‘আইডিয়া শিক্ষাচিন্তায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি যা ভেবেছেন, তা কার্যকর করার চেষ্টা করেছেন নিজের উদ্যোগে। পুঁথিগত বিদ্যা বা শিক্ষাভাবনাকে তিনি কখনই গ্রহণ করেননি। নিজের জীবন থেকে এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি থেকে যা পেয়েছেন, প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন তাই। শিক্ষাভাবনায় যে অচলায়তন তাকে আঘাত করেছেন নানাভাবে।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা শুধু সমকালীন নয়, অত্যন্ত আধুনিক ছিল বলেই আজও সমান প্রাসঙ্গিক এবং গ্রহণযোগ্য।