মুহূর্তের জোনাক আলো
যখন কালের খেয়া কিনারে ভিড়বে সন্ধ্যা নামে
পায়ে চলা সব পথ ফিরে তাকায় অবেলা
সবই তো ধূসরের বিবর্ণ কবিতা;
ঘরের দোচালে সাদা চালকুমড়োর এলোমেলো পড়ে থাকা
হেঁটে যায় শৈশব পবিত্র মাটির গড়ন
পথে পথে লুকানো যে গোখরা সাপের সাথে অবুঝ বেলায়
না বুঝে মরণঘাতী খেলা,
মকবুল মাঝির বাড়ির ঘর ছুঁয়ে বয়ে যায় মসৃণ চিকন পথ
দুচোখে এখনো লেগে আছে হেঁটে যায় কিশোর বগলে বই বেঁধে
স্বপ্নের দুয়োরে সবুজের অবারিত দিগন্ত পেরিয়ে।
এসব তো একদিন ছিলো কাঁচামাটির সুঘ্রাণ
বৃষ্টিতে গা ঝেড়ে রান্না ঘরের বেড়ায় চড়ুই জীবন
সেসব এখন অচেনা ভুলের শিরোনাম,
কেউ মনে রাখে না কাউকে-না সেই শৈশব পথ
না টিনের দোচালা ঘরের মায়া জড়ানো সাদা চালকুমড়ো
রান্না ঘরের বেড়ায় জুবুথুবু হয়ে বসে থাকা চড়ুই পাখিরা।
স্বপ্নরাও হারিয়ে যায় দূরের আকাশে রামধনু মেঘে
জীবনতরী যে ভিড়ে ভিড়ে আসে সময় এমন,
পায়ে চলা পথ আর একবার ফিরে পেতে চায় সবুজ বগলে
স্বপ্নরাঙানো সবুজ বই দিগন্ত পেরুনো প্রখর রোদ্দুর;
সব ভেঙে যায় সব নিভে যায় কালের খেয়ায়
কে কোথায় ভেসে যায় কে কোথায় যে হারিয়ে যায়!
কালের খেয়া যে কিনারে ভিড়বে হারাবে আঁধারে
. জীবন শুধুই মুহূর্ত জোনাক আলো।
আশ্চর্যরকম হলেও সত্য
আশ্চর্যরকম হলেও সত্য পলান পাগল যখন মেম্বারে দাঁড়ালো
পুরো গ্রাম ছাড়িয়ে তারও পরের গ্রাম -পুরো ইউনিয়ন
তারও পরের ইউনিয়ন চমকে উঠেছিল-ঘটনা কি সত্যি!
পলান পাগল মেম্বারে খাড়াইছে!
মাঠফাটা চৌচির রোদের মতো সত্যি
সবার মুখ চাওয়া-চায়ি
গ্রামের মান গেলো ইজ্জত গেলো !
এ গ্রাম তো পাগলের গ্রাম হয়ে গেলো
পলান পাগল যদি মেম্বারে জিতে যায়
এ গ্রামের মানুষও তো তাহলে পাগল!
একটা ভোটও যেন না পড়ে পলান পাগলের মার্কায়,
দৃঢ়তায় কণ্ঠ শক্ত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।
পলান পাগল মেম্বার হয়
নাম্বার ওয়ান মেম্বার
তার বিজয়ী মিছিলে পরিচিত সব দামিমুখ ।
পলান পাগল গায়ের জামা মাথায় বেঁধে
নাচতে নাচতে ঘন ঘন পানের পিক ফেলে কয়-
হালায় গ্রামের লোকের যে কী রুচি- আমাকেও ভোট দেয়!
আমারেও মেম্বার বানায়!
আমার মিছিলেও পাগলের সাথে পাগল সাইজা নাচে।
নদীর গল্প
বাঘা যতীনের দাপিয়ে বেড়ানো নদীটা এখন আর নেই
সেই পানসি নৌকার সারিও নেই
যৌবনের মুগ্ধতার কবিতার ঢেউখেলা শব্দও নেই
বিবর্ণ বিকেল যেন পড়ে আছে অন্ধকারে ভরে নিতে বুক।
কয়া বাজারের শুকনো ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে দূরের ভাঙাবুকে
দেবতীকে বললাম, তুমি নদী হও
বুকভরা ঢেউ হও
দুকূল উপচে পড়া পলিমাটির উর্বর স্বপ্ন হও।
বিরান জমিনে ফলেনি যে কতকাল সবুজ ফসল
স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নহীন মানুষেরা পোড়া চোখে যে তাকায়,
শ্মশানের মতো পড়ে থাকা শূন্য মাঠের চৌচির পিপাসায়
এখানেও একদিন দাপুটে যৌবন ছিল।
নদীটা যে মরে আছে
ফসলের মাঠ পুড়ে পুড়ে পড়ে আছে
দীর্ঘশ্বাসে বাতাসের বুক ভারি হয়ে পড়ে থাকে
বাঘা যতীনের সাহসী নদীটা এখন দুচোখে তো মরণ খোঁজে ।
দেবতীকে বললাম, তুমি নদী হও
দুকূল ভাসানো পলিমাটি স্রোতের উর্বরতার যৌবন হও
দেবতী তাকায় আমার দিকে, বললো, হবো;
তারপর মিশে গেলো প্রবল প্রপাত হয়ে যৌবনা দারুণ নদী।
১ Comment
রকিবুল হাসানের ৩টিকবিতাই সুন্দর; ভাবনার সচ্ছলতা, ভাষার সাবলীলতা, ছন্দের গতিময়তা ও আপন মৃত্তিকার ঘ্রাণ–সবকিছু মিলে নিজেদের সৃষ্টি। ধার করা কিছু নেই, কল্পকল্পনার কোষ্ঠকাঠিন্য নেই এতটুকু। আরামদায়ক।